হঠাৎ উত্থান ছাত্র সমন্বয়ক হয়েই ভবন নির্মাণ শুরু সন্দেহ প্রকাশ এলাকাবাসীর।

রাজধানীর গুলশানে চাঁদাবাজি করতে গিয়ে গ্রেফতার হওয়া ছাত্র সমন্বয়ক আবদুল রাজ্জাক সোলায়মান রিয়াদের হঠাৎ উত্থান নিয়ে নানান সন্দেহ প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসী।
‎জানা গেছে, নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার নবীপুর ইউনিয়নের নবীপুর সেকান্তর মৌলভী প্রকাশ ব্যাপারী বাড়ির আবদুল রাজ্জাক সোলায়মান রিয়াদ বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সম্মিলিত প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক। রিয়াদ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ছাত্র প্রতিনিধি হিসেবে দায়িত্বে আছেন বলেও জানা গেছে।

‎শনিবার (২৬ জুলাই) বিকালে গুলশান থানা পুলিশ গুলশানের ৮৩ নম্বর রোডে সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক এমপি শাম্মী আহম্মেদের বাসা থেকে রিয়াদসহ পাঁচজনকে চাঁদাবাজির অভিযোগে হাতেনাতে গ্রেফতার করে।
এ ঘটনায় রোববার সিদ্দিক আবু জাফর বাদী হয়ে গুলশান থানায় এ মামলা করেন।
‎জানা গেছে, নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার নবীপুর ইউনিয়নের আবদুল রাজ্জাক সোলায়মান রিয়াদ।

দিনমজুর রিকশাচালক বাবার ছেলে রিয়াদের হঠাৎ উত্থান হয় ছাত্র সমন্বয়ক হয়েই
৫ আগস্টের পর বদলাতে থাকে তার জীবন-জীবিকা। সাধারণ পোশাকের জায়গায় তার গায়ে চলে আসে দামি ব্র্যান্ডের শার্ট-প্যান্ট, পোশাক-আশাক। গ্রামের বাড়িতে চলছে একতলা বাড়ির নির্মাণ কাজ। ২ ভাই ২ বোনের মধ্যে রিয়াদ সবার ছোট। সে এখনো পড়ালেখা করে।

‎এলাকাবাসী রিয়াদের হঠাৎ উত্থান নিয়ে বেশ কয়েকদিন যাবত নানান সন্দেহ প্রকাশ করে আসছিলেন। তাদের ভাষ্যমতে, রিয়াদের আয়-উপার্জনের দৃশ্যমান কোনো উৎস ছিল না। অথচ খুব অল্প সময়েই বিত্ত-বৈভবে এলাকায় প্রভাবশালী হয়ে উঠেছেন।

‎এলাকাবাসী জানান, রিয়াদের বড় ভাই ও বাবা দুজনই রিকশা চালাতেন। বাবা বয়সের কারণে এখন রিকশা চালান না। বড় ভাই আবু রায়হানও এখন রিকশা চালান না। বাবা কৃষিকাজ করেন।

‎বড় ভাই আবু রায়হান ঢাকায় চাকরি করেন। হঠাৎ রিয়াদের উত্থান নিয়ে নানা সন্দেহ প্রকাশ করেছেন এলাকাবাসী। ‎কয়েক দিন আগে রিয়াদ বাড়িতে পুরাতন টিনের ঘরের জায়গায় পাকা ভবন নির্মাণ শুরু করেন। গত সপ্তাহে ছাদের ঢালাই হয়েছে। বাড়িতে ওই ঘরের ভিটি ছাড়া তার ভাইয়ের অন্য কোনো জায়গা নেই।

এ ঘটনা ছড়িয়ে পড়ার পর বাবা আবু রায়হান ও মা অসুস্থ হয়ে পড়েন। বাড়ির লোকজন তাদের পার্শ্ববর্তী দাগনভূঁইয়া পপুলার হাসপাতালে ভর্তি করেছেন।

‎১৭ জুলাই সকাল ১০টার দিকে রিয়াদ ও তার সহযোগী কাজী গৌরব অপু তাদের একটি প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য গুলশানের ৮৩ নম্বর রোডে সংরক্ষিত নারী আসনের সাবেক এমপি শাম্মি আহম্মেদের বাসায় যান। তখন তারা হুমকি ধমকি দিয়ে ৫০ লাখ টাকা ও স্বর্ণালংকার দাবি করেন।

টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে আওয়ামী লীগের দোসর আখ্যা দিয়ে গ্রেফতার করানোর হুমকি দেন এবং টাকার জন্য চাপ দিতে থাকেন তারা। একপর্যায়ে মামলার বাদী সিদ্দিক আবু জাফর বাধ্য হয়ে নিজের কাছে থাকা নগদ পাঁচ লাখ টাকা ও ভাইয়ের কাছ থেকে নিয়ে আরও পাঁচ লাখ টাকা দেন।

‎এ ঘটনার পর ১৯ জুলাই রাত সাড়ে ১০টার দিকে আসামি রিয়াদ ও অপু বাদীর বাসায় প্রবেশ করে তার ফ্ল্যাটের দরজায় স্বজোরে ধাক্কা মারেন। বিষয়টি গুলশান থানা পুলিশকে মোবাইল ফোনে অবহিত করলে আসামিরা চলে যান।

২৬ জুলাই বিকাল সাড়ে ৫টায় আসামি রিয়াদের নেতৃত্বে অপরাপর আসামিরা বাদীর বাসার সামনে এসে তাকে খুঁজতে থাকেন। বাসার দারোয়ান মোবাইল ফোনের মাধ্যমে তাকে বিষয়টি জানান। তখন আসামিদের দাবি করা বাকি ৪০ লাখ টাকা না দিলে তাকে পুলিশে ধরিয়ে দেবেন বলে হুমকি দিতে থাকেন।

পুলিশকে বিষয়টি অবহিত করলে তাৎক্ষণিক গুলশান থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে রিয়াদসহ পাঁচ আসামিকে হাতেনাতে গ্রেফতার করে এবং ওই সময় এজাহার নামীয় আসামি কাজী গৌরব অপু দৌড়ে পালিয়ে যান।

‎এ মামলার আসামিরা হলেন- কাজী গৌরব অপু, সিয়াম, সাদমান সাদাব, ইব্রাহিম হোসেন ও কিশোর মো. আমিনুল ইসলাম

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *