মধ্যরাতে ঢাকার নিস্তব্ধতা কাটিয়ে হাতিরঝিল যেন হয়ে উঠেছিল এক টুকরো বাংলাদেশ। এশিয়ান কাপ বাছাইপর্বে টানা তিন ম্যাচ জয় নিয়ে মধ্যরাতে দেশে ফিরেছে বাংলাদেশের নারী ফুটবলাররা। আর তাদের জন্যই এতো রাতে সংবর্ধনার আয়োজন করে বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশন। গত রোববার প্রথমবারের মতো এশিয়ান কাপে ওঠার ইতিহাস গড়া মেয়েদের দলের অন্যতম দুইজন সদস্য ঋতুপর্ণা চাকমা এবং মনিকা চাকমা। যারা আজ সকালেই ভুটানের লীগ খেলতে বাংলাদেশ ছেড়েছেন। তাই কালক্ষেপণ না করেই মধ্যরাতে আয়োজন করা হয় অনুষ্ঠানটির।
স্বাভাবিকভাবেই সবাই এ রাতে মনোযোগ দিয়েছিল বাফুফে সভাপতি তাবিথ আওয়ালের কথার দিকে। এতো রাতে প্রধান অতিথি সাংস্কৃতিক উপদেষ্টার উপস্থিতিতে জমকালো ভাবে আয়োজন। কোন বড় চমকের আশায় ছিলেন সকলেই। তবে তার বক্তব্য হয়তো আলো ছড়াতে পারেনি উপস্থিত ফুটবলার, সমর্থকদের মনে। সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে সভাপতি বলেন, ‘আপনারা দুটি কাজ করেছেন। নতুন করে ইতিহাস লিখছেন এবং আমাদের সমাজের মনমানসিকতা বদলানোর যাত্রায় এগিয়ে নিচ্ছেন। যেভাবে আমরা নারী দলের পেছনে ছিলাম, ভবিষ্যতেও থাকবো। আমরা আপনাদের ওপর আস্থা রাখছি এবং প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, আপনাদের পেছনে আমরা আছি।’
বাফুফে সভাপতি তার সংক্ষিপ্ত বক্তব্যের শেষে যোগ করেন, ‘আমাদের এখন একটাই লক্ষ্য – মিশন অস্ট্রেলিয়া’।
এ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ নারী দলের অন্যতম সদস্য ঋতুপর্ণা চাকমা বলেন , ‘আজকের যে পর্যায়ে এসেছি আমরা, এটা একটা টিমওয়ার্ক। ফুটবল কোনো ব্যক্তিগত খেলা নয়। বাংলাদেশের মেয়েরা জানে কীভাবে কঠিন পরিস্থিতিতে লড়াই করতে হয়। আপনারা অমাদের ওপর বিশ্বাস রাখবেন। আমরা আপনাদের নিরাশ করব না। আমরা শুধু এশিয়া না, বাংলাদেশকে বিশ্বমঞ্চে নিয়ে যেতে চাই।’
ঋতুপর্ণা যেভাবে মাঠে তার পায়ের জাদু দেখিয়ে অবাক করে দেন সবাইকে। তেমনি এ রাতেও তার এই কথায় আবেগ আপ্লুত হয়েছিলেন অনেকেই। তেমনি এই আত্মবিশ্বাসে ভরা বক্তব্য ছুঁয়েছিল প্রধান অতিথি সংস্কৃতিবিষয়ক উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকীকেও। তিনি বলেন, ‘এই মুহুর্তে তার কাছে দেশের সেরা অ্যাথলেট ব্যক্তিত্ব রাঙামাটির মেয়ে ঋতুপর্ণা চাকমা। মাননীয় উপদেষ্টা ঋতুকে লক্ষ্য করে প্রকাশ করেন নিজের উচ্ছ্বাস। তিনি বলেন, ‘আপনি একটি কথা বলেছেন, আপনারা আমাদের ওপর বিশ্বাস রাখবেন, বাংলাদেশের মেয়েরা জানে কীভাবে প্রতিকূল পরিস্থিতিতে দৌড়াতে হয়, এটা দারুণ কথা। বাংলাদেশ আপনাদের জন্য গর্বিত।’
অনুষ্ঠানে অধিনায়ক আফিঈদা খন্দকার প্রান্তি বলেন, ‘এখানে থাকতে পেরে খুবই ভালো লাগছে। এই মুহূর্ত কখনো ভোলার মতো নয়। সকলে আমাদের জন্য দোয়া করবেন আমরা যেন আরও ভালো কিছু করতে পারি। শুধু দক্ষিণ এশিয়া বা এশিয়া নয়। আমরা যেন বিশ্বমঞ্চে দেশকে আরও অনেকদূর নিয়ে যেতে পারি। আমাদের জন্য সবাই দোয়া করবেন।’
সর্বশেষ সাফ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর বাফুফে গত বছর দেড় কোটি টাকা বাংলাদেশের জাতীয় দলের মেয়েদের দেয়ার ঘোষণা করেছিল। কিন্তু সেই অর্থ এখনো বুঝে পাননি নারী ফুটবলাররা। মাঝে আংশিকভাবে কয়েকজন নারী ফুটবলারকে সম্মানি টাকা প্রদান করে বাফুফে। দেশে বর্তমানে মেয়েদের জন্য খেলার পরিবেশ গড়ে তোলা সম্ভব হয়নি। চলমান নেই কোন নারী ফুটবল লীগও। এ অনুষ্ঠানে সেই কথাটি তুলে ধরেন বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক আমিনুল হক। আমিনুল বলেন, ‘সাধারণ মানুষের পক্ষ থেকে নারী ফুটবল দলকে শুভেচ্ছা, শুভকামনা থাকলো। সারা বাংলাদেশের মানুষ তাদের দিকে তাকিয়ে আছে। আশা করবো তারা দেশের জন্য সামনে আরো ভালো কিছু নিয়ে আসবে’। বাফুফের প্রতি আশা ব্যক্ত করে আমিনুল হক বলেন, ‘আমি আশা করি আমাদের এই নারী ফুটবল দলের জন্য আগামীতে আরও সুযোগ সুবিধা বৃদ্ধির মাধ্যমে তাদেরকে পেশাধারী মনোভাব দিয়ে আমরা আরও বেশি সামনে এগিয়ে যেতে পারি। সেই প্রত্যাশাই থাকবে’।
সম্পাদক ও প্রকাশকঃ মোঃ রফিকুল ইসলাম
All rights reserved ©2025 freedomjanata24.news