পুকুরে উঠেছে চারতলা ডিএন প্লাজা মার্কেট মামলা করতেই চলে গেল প্রায় ১৫ বছর!

রাউজানের ঊনসত্তরপাড়ায় ২০১০ সালে শতবর্ষী পুকুর ভরাট করে মার্কেট নির্মাণের অভিযোগ উঠলে সেই সময় আড়াই লাখ টাকা জরিমানা করে পরিবেশ অধিদপ্তর। সেখানে কোনো স্থাপনা করবেন না– এমন অঙ্গীকার করে মুচলেকাও দেন পুকুর মালিক।
ভরাট করা পুকুরে উঠেছে চারতলা ডিএন প্লাজা মার্কেট। ১৫ বছর পর হঠাৎ ‘ঘুম ভেঙেছে’ পরিবেশ অধিদপ্তরের। শর্ত না মেনে পরিবেশের ক্ষতি করায় জমির মালিকদের বিরুদ্ধে এবার ফৌজদারি মামলা হয়েছে। ৪ আগস্ট চট্টগ্রামের পরিবেশ অধিদপ্তরের গবেষণা কর্মকর্তা মো. আশরাফ উদ্দিন বাদী হয়ে রাউজান থানায় মামলাটি করেন। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় ক্ষমতার জোরে এ অপকর্ম করা হয় বলে অভিযোগ রয়েছে।

চট্টগ্রাম পরিবেশ অধিদপ্তরের গবেষণা কর্মকর্তা মো. আশরাফ উদ্দিন বলেন, পুকুর ভরাট করে বহুতল ভবন ও মার্কেট নির্মাণ করে পরিবেশের ক্ষতি করেছেন অভিযুক্ত ব্যক্তিরা। পুকুর ভরাট করার সময় ২০১০ সালে পরিবেশ থেকে তাদের নোটিশ করা হয়। শুনানিতে হাজির হয়ে পুকুর ভরাট করবে না মর্মে লিখিত অঙ্গীকার করেছিলেন। তখন ভরাট করা অংশ আগের পুকুরে ফিরিয়ে দেবেন শর্তে তাদের জরিমানা করে অভিযোগ নিষ্পত্তি করা হয়।

আশরাফ উদ্দিন বলেন, পুকুর ও জমির মালিকরা শর্ত ভেঙে ভবন নির্মাণ করলেও কেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি, তা জানা নেই। এ-বিষয়ক নথিও পাওয়া যাচ্ছে না। সে সময় আমি এখানে কর্মরত ছিলাম না। এখন বিষয়টি নজরে আসার পর তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

৫ আগস্টের পর আওয়ামী লীগ নেতা রোকন উদ্দিন, মার্কেটের মালিক ছাবের আহম্মেদ তালুকদারসহ তিন অভিযুক্ত পলাতক। তবে মার্কেটের তত্ত্বাবধায়ক মো. আবদুল্লাহ বলেন, ৫ আগস্টের পর থেকে মালিক ছাবেরসহ অন্যরা কোথায় আছেন, জানি না। আমি মার্কেট দেখাশোনার সার্বিক দায়িত্ব পালন করছি। পুকুর ভরাট করে মার্কেট হয়েছে কিনা, তা আমার জানা নেই। এখানে কোনো পুকুর ছিল, তা শুনিনি।

পরিবেশকর্মী আবদুর রাজ্জাক বলেন, পরিবেশ রক্ষায় অধিদপ্তর ঠিক সময়ে ঠিক কাজ কখনও করেনি, এখনও করতে পারছে না।
রাউজানের পাহাড়তলী ইউনিয়নের ঊনসত্তরপাড়া এলাকায় ৬৭ শতক জমির ওপর ডিএন প্লাজা নামে বিশাল মার্কেট রয়েছে। এখানেই দেড় যুগ আগে বিশাল পুকুর ছিল। এমনকি সরকারি রেকর্ড ও খতিয়ানে এ স্থানটি পুকুর শ্রেণি হিসেবে অন্তর্ভুক্ত। পরে তা নাল শ্রেণিতে পরিবর্তন করা হয়।

অভিযোগ পেয়ে গত ২৪ জুলাই পুকুর ভরাট করে স্থাপনা তৈরির ঘটনা সরেজমিন তদন্ত করে পরিবেশ অধিদপ্তরের একটি দল। তদন্তে তারা পুকুর ভরাট করে ভবন নির্মাণের সত্যতা পান। পরে মামলায় জমির মালিক রাউজানের বাগোয়ান ইউনিয়নের উত্তর-পশ্চিম তালুকদার বাড়ির ছাবের আহম্মদ তালুকদার, তাঁর ভাগনে আওয়ামী লীগ নেতা মো. রোকন উদ্দিন ও মো. লোকমানকে আসামি করা হয়। এতে এ কে এম আকতার কামাল চৌধুরী, শাহেদুল আলম চৌধুরী ও এম এ মান্নান নামে তিন ব্যক্তিকে সাক্ষী করা হয়েছে।

মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, ২০১০ সালে পুকুর ভরাটের বিষয়ে পরিবেশ অধিদপ্তরে অভিযোগ দেওয়া হলে তৎকালীন পরিচালক অভিযুক্তদের শুনানি গ্রহণ করে দুই লাখ ৩০ হাজার ৫৮০ টাকা ক্ষতিপূরণ আরোপ করেন। ওই আদেশে অবিলম্বে ভরাট বন্ধ করে নির্মাণসামগ্রী, মাটি ও প্রাচীর অপসারণের নির্দেশ দেওয়া হয়। অভিযুক্তরা পুকুর আগের অবস্থায় ফেরানোর লিখিত অঙ্গীকার করলেও প্রকৃতপক্ষে আদেশ মানেননি। পুরো পুকুর ভরাট ও ভবন নির্মাণ করে পরিবেশের ক্ষতি করেছেন

পুকুর ভরাটের দায়ে পাঁচ ব্যক্তি কারাগারে
এদিকে রাউজানের ১৫০ বছরের পুরোনো পুকুর ভরাট করার মামলায় জনপ্রতিনিধিসহ পাঁচ ব্যক্তিকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। গত রোববার চট্টগ্রাম সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মাহমুদুল হকের আদালত এই আদেশ দেন। চট্টগ্রামের পরিবেশ অধিদপ্তরের মামলার শুনানি শেষে কারাগারে পাঠানোর ঘটনা ঘটল।

আসামিরা হলেন– নোয়াপাড়া ইউনিয়নের সদস্য মুহাম্মদ খোরশেদুল ইসলাম, পূর্ব কচুখাইন গ্রামের বাসিন্দা মুহাম্মদ জাহেদুল ইসলাম, আলী আকবর, মকবুল আহমদ ও মুহাম্মদ খোরশেদ।

পরিবেশ অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম কার্যালয়ের গবেষণা কর্মকর্তা মুহাম্মদ আশরাফ উদ্দিন বলেন, পুকুর ভরাটের একটি মামলায় আত্মসমর্পণ করে জামিন নিতে গেলে অভিযুক্ত ব্যক্তিদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত। ২০২৩ সালের ৩১ মে অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক আফজার্নল ইসলাম বাদী হয়ে তাদের বিরুদ্ধে পরিবেশ আইনে মামলাটি করেছিলেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *