গরিবের ছেলে, টাকার লোভ সামলাতে পারিনিআব্দুর রাজ্জাক রিয়াদ।

চাঁদাবাজির অভিযোগে গুলশান থানার মামলায় বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের বহিষ্কৃত নেতা আব্দুর রাজ্জাক রিয়াদ আদালতে দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, চাঁদাবাজির ১০ লাখ টাকা আমি ও অপু (একই সংগঠনের আরেক বহিষ্কৃত নেতা) সমানভাগে ভাগ করে নিয়েছি। আমি গরিবের ছেলে, তাই টাকার লোভ সামলাতে পারিনি। এছাড়াও পুলিশের কথা বিশ্বাস করে ওই বাসায় গিয়ে গ্রেফতার হন বলে জবানবন্দিতে জানান তিনি।

মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. সেফাতুল্লাহের আদালত তার জবানবন্দি রেকর্ড করেন। জবানবন্দিতে তিনি জানান, বিভিন্ন সময়ে ফ্যাসিবাদী লোকজন গ্রেফতার করার ক্ষেত্রে পুলিশকে সহযোগিতা করেছেন। ঘটনার দিন ১৭ জুলাই রাতে তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সিনিয়র সহসভাপতি জাকির হোসেন মঞ্জুর ফোনের মাধ্যমে গুলশান জোনের ডিসির সঙ্গে যোগাযোগ করেন। তখন তিনি ডিসিকে জানান, গুলশান থানার আওয়ামী লীগের আন্তর্জাতিকবিষয়ক সম্পাদক এবং সাবেক এমপি শাম্মী আহমেদ নিজ বাসায় অবস্থান করছেন। পরবর্তীতে ডিসি জানান, বিষয়টি তিনি গুলশান থানার ওসিকে জানিয়েছেন। এরপর রাত ২টার দিকে তিনিসহ মঞ্জু, জানে আলম অপু, সাবাব হোসেন, আতিক শাহরিয়ার, সাদাকাউম সিয়াম, তানিম ওয়াহিদ ও আতিক থানায় যান। তখন ওসি জানান, এত রাতে গুলশান সোসাইটিতে অভিযান চালানো যাবে না। ফজরের আজান পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। অপেক্ষার পর গুলশান থানার একটি টিমের সঙ্গে তারা শাম্মী আহমেদের বাড়িতে যান। গুলশান থানার ওসি (তদন্ত) অভিযানের নেতৃত্ব দেন। তবে শাম্মীকে বাসায় না পেয়ে সকাল সাড়ে ৭টায় তারা ফিরে আসেন।

পুলিশের সঙ্গে অভিযান শেষে অপু রিয়াদকে বলেন, ওই বাসা থেকে তিনি শাম্মীর এয়ারপড নিয়ে এসেছেন। পরে তারা দুজন সকাল ১০টার দিকে এয়ারপড ফেরত দেওয়ার অজুহাতে আবারও ওই বাসায় যান। গিয়ে তারা এয়ারপড ফেরত দেন। তখন অপু পানি খাওয়ার কথা বলে ওই বাসায় প্রবেশ করেন। তখন অপু বাসায় থাকা শাম্মীর স্বামীকে বলেন, শাম্মী বাসায় আছেন। আমরা তাকে পুলিশে দিয়ে দেব। তখন শাম্মীর স্বামী ভয় পেয়ে তাদের টাকা অফার করেন। তখন অপু ৫০ লাখ টাকা দাবি করেন। কিন্তু এত টাকা বাসায় নেই বলে জানান শাম্মীর স্বামী। পরবর্তীতে ১০ লাখ টাকা নিয়ে চলে আসেন এবং সমান ভাগ করেন তারা।

জবানবন্দিতে রিয়াদ আরও বলেন, পরবর্তীতে ২৬ জুলাই বিকালে চাঁদার বাকি ৪০ লাখ টাকা আদায় করতে ইব্রাহিম হোসেন মুন্না, সিয়াম, সাদমানকে ওই বাসায় পাঠাই। আর আমি গুলশান মোড়ে অবস্থান নেই। পুলিশ ফাঁদ পেতে আমাকেও ওই বাসায় যেতে বলে। তখন পুলিশের কথা বিশ্বাস করে ওই বাসায় যাই। তখন পুলিশ এসে টাকাসহ হাতেনাতে আমাদের গ্রেফতার করে। আমি গরিবের ছেলে। টাকার লোভ সামলাতে পারিনি।
এদিন রিয়াদসহ চার আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়। এ সময় রিয়াদ স্বেচ্ছায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে সম্মত হন। এরপর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও গুলশান থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) মোখলেছুর রহমান তার জবানবন্দি রেকর্ড করতে আবেদন করেন। জবানবন্দি শেষে তাকে কারাগারে পাঠানো হয়। এছাড়া অপর তিন আসামিকে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করা হয়। আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. জিয়াদুর রহমানের আদালত তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। কারাগারে যাওয়া অন্যরা হলেন-মো. ইব্রাহিম হোসেন, সাকাদাউন সিয়াম ও সাদমান সাদাব। এছাড়া গত ২ আগস্ট অপর আসামি বাংলাদেশ গণতান্ত্রিক ছাত্রসংসদের যুগ্ম আহ্বায়ক (বহিষ্কৃত) জানে আলম অপুর চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। বর্তমানে তিনি রিমান্ডে রয়েছেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *