কারফিউ চলছে

সুনসান নীরবতা গোপালগঞ্জে

কোথাও কেউ নেই, সুনসান নীরবতায় গোপালগঞ্জ। গতকাল বুধবার রাত ৮ থেকে ২২ ঘণ্টার কারফিউ জারির পরে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীদের দেখা যায়নি। এদিন সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার পর থেকে পুরো শহরজুড়ে কোথাও কোনো নেতা-কর্মীদের উপস্থিতি চোখে পড়েনি। নতুন করে কোনো ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও ইটপাটকেল নিক্ষেপের ঘটনা ঘটেনি। সর্বশেষ আজ বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ৯টা পর্যন্ত কোনো সহিংসতার খবর পাওয়া যায়নি।

গতকাল সন্ধ্যার পর থেকে গোপালগঞ্জ শহরের প্রধান প্রধান সড়ক ও গলি পথগুলো ছিল নিশ্চুপ। শহরের বিভিন্ন সড়কে পড়ে আছে ইটপাটকেল, লাঠিসোঁটা, পোড়া টায়ার, বিএনপির ফেস্টুন, ব্যানার ও তোরণ তৈরির বাঁশ-কাঠ।গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোতে পুলিশ, সেনাবাহিনী ও বিজিবির সদস্যরা টহল দিচ্ছে। জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কাউকেই বাড়ির বাইরে বের হতে দেখা যায়নি। চেকপোস্ট বসিয়ে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা বাইরে বের হওয়া সকল শ্রেণি-পেশার মানুষদের তল্লাশি করছে।

এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এম. রকিবুল হাসান মানবজমিনকে বলেন, ‘গোপালগঞ্জ শহরের পরিস্থিতি এখন পুরোপুরি শান্ত এবং প্রশাসনের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। গতকাল সন্ধ্যার পর থেকে এখন পর্যন্ত আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের কোনো নেতা-কর্মীদের সড়কে দেখা যায়নি। বিভিন্ন সড়কে পুলিশ ও সেনাবাহিনীর সদস্যরা টহল দিচ্ছে। পাশাপাশি অতিরিক্ত ৪ প্লাটুন বিজিবিও মোতায়েন করা হয়েছে। গতকাল রাত থেকে এখন পর্যন্ত গোপালগঞ্জে কোনো অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটেনি।’

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, ধরপাকড়ের ভয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন জেলার সাধারণ মানুষ। অনেকের সঙ্গে মানবজমিন প্রতিনিধি মোবাইল ফোনে কথা বলে আতঙ্কিত হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছেন। তাদের ধারণা, গভীর রাত থেকে কারফিউ চলমান সময়ে গণহারে গ্রেপ্তার করা হতে পারে। 

অপরদিকে গতকাল সংঘর্ষে নিহত গোপালগঞ্জ শহরের উদয়ন রোডের সন্তোষ সাহার ছেলে দীপ্ত সাহা (৩০), কোটালিপাড়ার হরিণাহাটি গ্রামের কামরুল কাজীর ছেলে রমজান কাজী (১৯), টুঙ্গিপাড়ার সোহেল রানা (৩৫) এবং সদর উপজেলার ভেড়ার বাজার এলাকার ইমনের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। স্বজনদের কান্না ও আহাজারিতে এলাকাজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। এছাড়াও গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) সমাবেশকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের কারণে গোপালগঞ্জ অনিরাপদ হয়ে পড়ায় এই জেলায় আজ এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা স্থগিত করেছে সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ড।

উল্লেখ্য, গোপালগঞ্জে জাতীয় নাগরিক পার্টি’র (এনসিপি) ‘মার্চ টু গোপালগঞ্জ’ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে বুধবার দিনব্যাপী হামলা, ককটেল বিস্ফোরণ, গাছ ফেলে সড়ক অবরোধ, উপজেলা নির্বাহী অফিসারের গাড়িতে ভাঙচুর ও পুলিশের গাড়িতে আগুন দেয়ার ঘটনা ঘটে। এতে রণক্ষেত্রে পরিণত হয় গোপালগঞ্জ। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৪ জন নিহত হয়েছেন এবং প্রায় দুই শতাধিক আহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *