ইসরায়েল আমাকে হত্যার চেষ্টা করেছিল: ইরানের প্রেসিডেন্ট

ইরানের প্রেসিডেন্ট মাসুদ পেজেশকিয়ান বলেছেন, সংঘাতের সময় ইসরায়েল তাঁকে হত্যার চেষ্টা করেছিল। মার্কিন রক্ষণশীল উপস্থাপক টাকার কার্লসনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি এ কথা বলেন। গতকাল সোমবার সাক্ষাৎকারটি সম্প্রচার করা হয়।

সাক্ষাৎকারের বেশির ভাগ অংশে পেজেশকিয়ান সোজাসাপটা কথা বলেন। এতে ইরানের প্রেসিডেন্ট প্রত্যাশিত উত্তর দিয়েছেন। একপর্যায়ে তিনি বলেন, ‘ইরানের জন্য আমি আমার জীবনকে কোরবানি দিতেও ভয় পাই না।’

ইসরায়েল তাঁকে হত্যার চেষ্টা করেছিল—এ কথা বিশ্বাস করেন কি না, টাকার কার্লসনের এমন প্রশ্নের জবাবে পেজেশকিয়ান বলেন, ‘হ্যাঁ, তারা আমাকে হত্যার চেষ্টা করেছিল। তারা সেই অনুযায়ী কাজও করেছে, তবে তারা ব্যর্থ হয়েছে।’

কখন তাঁকে হত্যার চেষ্টা করা হয়েছিল, সে ব্যাপারে স্পষ্ট কিছু না জানিয়ে পেজেশকিয়ান শুধু বলেন, ‘একটি বৈঠকের সময়।’

ইরানের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমি একটি বৈঠকে ছিলাম। তারা সে জায়গায় বোমা হামলার চেষ্টা করেছিল, যেখানে আমরা বৈঠক করছিলাম।’

সাক্ষাৎকারে পেজেশকিয়ান বলেন, ‘আমি আমার দেশ রক্ষায় প্রাণ দিতে ভয় পাই না। আমাদের কোনো সরকারি কর্মকর্তা জীবন দিতে ভয় পান না। কিন্তু আরও রক্তপাত, আরও হত্যাকাণ্ড কি এ অঞ্চলে শান্তি, স্থিতিশীলতা ও নিরাপত্তা বয়ে আনবে?’

পেজেশকিয়ান বলেন, ‘আমরা পারমাণবিক বোমার পেছনে কখনো ছুটিনি। ইরান কখনোই পারমাণবিক বোমা বানাতে চায়নি।’

সাক্ষাৎকারে ইরানের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘সত্য কথা হলো আমরা অতীতে, বর্তমানে বা ভবিষ্যতে—কখনোই পারমাণবিক বোমা তৈরি করতে চাইনি। কারণ, এটি ভুল। এটি আমাদের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতার নির্দেশনারও বিরুদ্ধে।’

পেজেশকিয়ান আরও বলেন, ‘পারমাণবিক বোমা ধর্মীয়ভাবে হারাম। আন্তর্জাতিক পারমাণবিক শক্তি সংস্থার (আইএইএ) সঙ্গে সহযোগিতার মাধ্যমে আমরা সেটাই প্রমাণ করেছি।’

ইরান কতটা ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করছে—টাকার কার্লসনের এমন প্রশ্নের সরাসরি উত্তর না দিয়ে পেজেশকিয়ান বলেন, ‘আমরা এ বিষয়ে আলোচনা ও পর্যবেক্ষণে প্রস্তুত। আমরা যখন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনায় বসেছিলাম, তখন ইসরায়েল ১৩ জুন বিনা উসকানিতে হামলা চালিয়ে সে আলোচনা ভেঙে দিয়েছে।’

পেজেশকিয়ান বলেন, ‘আমরা আবারও পারমাণবিক আলোচনা শুরু করতে আগ্রহী, তবে আমরা যুক্তরাষ্ট্রের ওপর বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেছি।’

ইরানের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমাদের আলোচনায় বসতে আপত্তি নেই। কিন্তু প্রশ্ন হলো আমরা কীভাবে নিশ্চিত হব, আলোচনার মাঝপথে আবার ইসরায়েলকে হামলার অনুমতি দেওয়া হবে না?’

পেজেশকিয়ান বলেন, ‘আমার পরামর্শ হলো যুক্তরাষ্ট্র যেন এমন যুদ্ধে না জড়ায়, যা তাদের যুদ্ধ নয়। এটা নেতানিয়াহুর যুদ্ধ। তাঁর লক্ষ্য হলো অন্তহীন যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়া।’

সাক্ষাৎকারে ইরানের প্রেসিডেন্ট বলেন, তাঁদের লক্ষ্য হলো শান্তি। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনা ও সংলাপের মাধ্যমে দ্বন্দ্বের সমাধান সম্ভব। তিনি বলেন, ‘আমরা সব সময়ই শান্তির পক্ষে ছিলাম। আমি মন থেকে বিশ্বাস করি, আল্লাহ আমাদের অল্প সময় বাঁচতে দিয়েছেন। সেই সময়টা শান্তি ও সম্প্রীতিতে থাকা উচিত।’

ইরানি নেতা বলেন, গত ২০০ বছরে ইরান কোনো দেশে আক্রমণ করেনি; বরং বারবার ইরানের ওপর যুদ্ধ চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। যেমন ইরাক যুদ্ধ ও সাম্প্রতিক ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধ।

ট্রাম্প অঞ্চলকে শান্তির পথে নিতে পারেন

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্পর্কে পেজেশকিয়ান বলেন, তাঁর বিশ্বাস, মধ্যপ্রাচ্য ও বিশ্বে শান্তি ফিরিয়ে আনার ক্ষমতা ট্রাম্পের আছে। ইসরায়েলকে নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতাও তাঁর রয়েছে। তিনি যদি তা না করেন, তাহলে কেবল মধ্যপ্রাচ্যে আরেকটি যুদ্ধ বাধবে, আরও অস্থিরতা ছড়াবে। অথচ এ যুদ্ধ যুক্তরাষ্ট্রের স্বার্থে নয়।

আইএইএ ইসরায়েলের সঙ্গে তথ্য ভাগাভাগি করছে কি না, কার্লসনের এমন প্রশ্নের উত্তরে পেজেশকিয়ান বলেন, ‘আমাদের মধ্যে বিশ্বাস নেই। এ সংস্থার সাম্প্রতিক প্রতিবেদনগুলো আমাদের পারমাণবিক স্থাপনায় ইসরায়েলকে অবৈধ হামলা চালানোর সুযোগ করে দিয়েছে। এমনকি এরপরও সংস্থাটি ওই হামলার নিন্দা করেনি বা বন্ধ করার কোনো চেষ্টা করেনি।’

ইরানের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমরা নিজের পায়ে দাঁড়াতে পারি। রাশিয়া বা চীনের সামরিক সাহায্য ইরান চাইবে না। আমরা আল্লাহকে বিশ্বাস করি। আমরা নিজেরাই নিজেদের রক্ষা করতে পারি।’

কার্লসন বলেন, ইরানি প্রেসিডেন্টের এ সাক্ষাৎকার নেওয়ার জন্য তিনি সমালোচিত হতে পারেন। তবে তিনি আত্মপক্ষ সমর্থন করে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের সব তথ্য জানার অধিকার আছে। এমনকি তারা যাদের সঙ্গে লড়ছে, তাদের কথাও শোনার অধিকার রয়েছে।

পেজেশকিয়ানের এ সাক্ষাৎকার এমন এক সময়ে নেওয়া হয়েছে, যখন যুক্তরাষ্ট্র জুনের শেষ দিকে ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে। ট্রাম্পের এ সিদ্ধান্ত নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা হয়েছে। এমনকি তাঁর নিজের ‘মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন’ (এমএজিএ) সমর্থকেরাও হামলার সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন। তাঁরা বলছেন, মধ্যপ্রাচ্যে তাঁরা আরেকটি ‘চিরস্থায়ী যুদ্ধ’ চান না।

কয়েক সপ্তাহ ধরে কার্লসনও ইরানে হামলার ট্রাম্প প্রশাসনের সিদ্ধান্তের সমালোচনা করে খোলাখুলি কথাবার্তা বলেছেন। সম্প্রতি ভাইরাল হওয়া এক সাক্ষাৎকারে টাকার কার্লসন রিপাবলিকান সিনেটর টেড ক্রুজকে বলেন, ‘আপনি ইরান সম্পর্কে কিছুই জানেন না।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *